
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অশালীনভাবে একজন সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদের শরীর অশালীনভাবে স্পর্শ করার অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হলো। এর আগে তাকে জোন ৭ এ বদলী করা হয়েছিলে। প্রায় ১০ বছর পর রাজউকের ক্ষমতাধর ব্যক্তি শেখ শাহীনকে বদলী করা হয়। আর ১০ নভেম্বর রাজউক চেয়ারম্যন মেজর জেনারেল (অব:) মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান সরকার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে শেখ শাহীনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
যে অভিযোগে বরখাস্ত
রাজউকের অফিস আদেশে বলা হয়-জোন ৭ এর সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা কনিকাকে ১০ নভেম্বর সকাল ১০.৩০ মিনিটের দিকে অনাকাঙ্খিত, অপ্রত্যাশিত ও অশালীনভাবে শেখ শাহীনুল ইসলাম তার শরীর স্পর্শ করেন। ঘটনার আকষ্মিকতায় ফারজানা কনিকা হতভম্ব হন। এবং মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড হয়ে যান। এই অভিযোগের পর অসদাচরণের অভিযোগে শেখ শাহীনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
দুর্নীতির অভিযোগ
এর আগে গত ৪ জুন এক অফিস আদেশে শেখ শাহীনুল ইসলামকে রাজউক এর পরিচালক (জোন ৭) এ বদলী করা হয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিন উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক আদেশে শেখ শাহীনুল ইসলামকে বদলী করা হয়। শেখ শাহীনুল ইসলামের স্থলে জোন ৭ এর পরিচালক মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।
গত প্রায় ১০ বছরে তার বিরুদ্ধে পূর্বাচল শহর (এটেস্ট ও ভূমি-২) এ ঘুষ ও নানাবিধ অভিযোগের শেষ নাই। একাধিক চেয়ারম্যান এসে চলে গেছেন, কিন্তু শেখ শাহীনুল ইসলাম তার চেয়ারে বসে রাজার হালে দুর্নীতি করে গেছেন। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীর্তিতে রাজউকের সবাই অবগত থাকলেও কেউ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহিস পায়নি। সবশেষ এক বিচারকের কাছে ২ কোটি টাকা ঘুষ দাবী করে আলোচনা আসেন শেখ শাহীন। এসব ছাড়াও রাজউক ভবনে ডেকে ঠিকাদারকে মারধরের ঘটনাও ঘটিয়েছেন গোপালগঞ্জের শেখ পরিবারের সন্তান পরিচয় দেয়া শেখ শাহীনুল ইসলাম।
এদিকে শেখ শাহীনুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্ত করার খবরে শুনে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুখে আনন্দ ফুটেছে। মনের আশা পূরন হয়েছে এমন ভাবনা থেকে কেউ কেউ মজসিদ ও ফকিরদেরকে টাকাও বিতরণ করেছেন। আবার কারো কারো মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ শেখ শাহীনুল ইসলামের দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পুরো পূর্বাচল শহর জুড়ে নিজের সিন্ডিকেট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে শাহীন। শেখ শাহীনুল ইসলামের সিন্ডিকেট সদস্য় হিসেবে আছেন পূর্বাচল প্রকল্প থেকে সদ্য বদলিকৃত উপপরিচালক (এস্টেট) গোপালগঞ্জের বাসিন্দা নায়েব আলী শরীফ। তিনি রাজউকের সদস্য (এস্টেট) এর ডান হাত হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
নায়েব আলী শরীফ
গোপালগঞ্জ জেলায় তার বাড়ী। আর এ করণেই তিনি রাজউক প্রশাসনে বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকেন। এখনো অব্যাহত আছে তার সেই মর্যাদা। রাজউক সুত্রে জানা গেছে, নায়েব আলী শরীফ পূর্বাচল প্রকল্পের উপপরিচালক (এস্টেট) পদে যোগদান করেই পুরো প্রকল্পটিকে তার নিজস্ব তালুক বা জমিদারী স্বত্ত্ব মনে করছেন। যে কারণে তিনি প্রকল্পের প্লট হস্তান্তর, রুপান্তর, আদীবাসীদের প্লট প্রদানে নানা হয়রানি শুরু করেছেন। কাগজপত্রের ত্রুটি ধরে প্লট মালিকদের সীমাহীন নাজেহাল করছেন। আবার দাবী মোতাবেক ঘুস পেলেই সব আপত্তি গায়েব করে দিচ্ছেন। তিনি বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লট মালিকদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করার হুমকি দিয়েও অনৈতিক অর্থ আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন আসছে।